জোর করে বিয়ে
জোর করে বিয়ে
---উস্তাদ নোমান আলী খান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেন।
যার নামে তােমরা একে অপরের কাছে চাও, তার ব্যাপারে সচেতন
হও। সূরা নিসা : ৪
এরপর তিনি আরও বললেন, ; -এর মানে সতর্ক হও, সচেতন হও।
গর্ভের সম্পর্কের মানুষদের ব্যাপারে ঋণী থাকার বোেধ জাগাও।
পুরাে অর্থটা তাহলে এই দাঁড়াল যে, গর্ভের সাথে যুক্ত যেকোনাে বিষয়কে
আমাদের কদর করতে হবে। যে কারণে, অন্যান্য পারিবারিক সম্পর্কগুলাের
চেয়ে ইসলাম আমাদের মায়েদের অনেক সম্মান দেয়। তবে গর্ভের সাথে যুক্ত
সম্পর্ক শুরু হয় বিয়ের মাধ্যমে। সেজন্য এই আয়াত শুরু হয়েছে এভাবে-
হে লােকসকল, তােমাদের সেই প্রভুর ব্যাপারে সতর্ক থাক, যিনি এক
আত্মা থেকে তােমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং সেখান থেকে তার সঙ্গীকে
সৃষ্টি করেছেন।' সূরা নিসা : ০১
এই আয়াতটি শুরু হয়েছে বিয়ের কথা বলে। আর তাই নবিজি বিয়ের
অনুষ্ঠানে এই আয়াত দিয়ে খুতবা শুরু করতেন। মােটামুটি যেকোনোে বিয়েতে
উপস্থিত থাকলে, আপনারা এই আয়াতটি শুনে থাকবেন।
স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক অনেক পবিত্র একটি সম্পর্ক। একান্ত নিবিড় একটি সম্পর্ক।
আল্লাহ কী বলছেন শুনুন:
'এই নারীরা তােমাদের থেকে এক পাকা কথা নিয়েছে।
সূরা নিসা : ২১
আল্লাহ তায়ালা অনেক জোরালাে ভাষায় এটি বলেছেন।
আমরা পুরুষরা ভাবি, বিয়ের সব নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে, তাই না? অথচ এই আয়াতটার প্রকাশভঙ্গী অদ্ভুত। এখানে বলা হচ্ছে, 'আখাযনা'; কিন্তু
আখাযতুম মিনহুন্না' নয়। মানে তােমরা তাদের থেকে কথা নাওনি। বরং
তারাই তােমাদের থেকে কথা নয়েছে। তারা তােমাদের দায়বদ্ধ করেছে।
অর্থাৎ সিদ্ধান্তটা তারাই নিয়েছে।
এই বিষয়টি সামনে নিয়ে এলাম। কারণ , দুঃখজনকভাবে বেশিরভাগ মুসলিম
সমাজে মেয়েদের নিজেদের পছন্দমতো বিয়ে করার সুযোেগটা ছিনতাই করে
নেয়া হয়েছে। মা-বাবারা মনে করেন, তারাই সব ভালাে বােঝেন। তাদের
ছেলে-মেয়েরা কিছু বােঝে না। সুতরাং, আমি আমার মেয়েকে যার সাথে ইচ্ছা,
তার সাথে বিয়ে দেব। যাকে যােগ্য মনে করি, তার সাথেই দেব। তাকে সে
পছন্দ করুক বা নাই করুক, এতে কিছু যায় আসে না। রাজি না থাকলে,
মেয়েটি বােকামি করছে। আমি যদি কিছুক্ষণ তার সাথে চেঁচামেচি করি, জোর
গলায় কথা বলি, তাকে যথেষ্ট লজ্জিত করি, তাহলে একসময় তাকে মেনে
নিতেই হবে। কারণ, সে তাে আসলে কিছুই বোঝে না।
আমরা মেয়েদেরকে নিজেদের মতাে সিদ্ধান্ত নিতে দিই না। নিদেনপক্ষে
তাদেরকে ভাবারও অবকাশ দিই না। নির্মমভাবে তাদেরকে মানসিক
চাপে ফেলে দিই।
কিছু কিছু মুরুকি এরকম করেন। আমাদের উপমহাদেশে তাে এটা অহরহই
হয়ে থাকে। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও কমবেশি এমন হয়।
দেখবেন, কোনাে প্রস্তাব এলে, নিজের লোকেরা বলবে, 'তুমি যে এত মােটা,
বিশ্রী, কালাে, বেঁটে তােমাকে কে বিয়ে করবে। এই যে এই ছেলেটা আসছে,
এটাই তােমার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য। একে মেনে ।নিয়ে নিয়ে করে ফেল। এটাই
তােমার জন্য ভালাে হবে।
তারা কিছ্তু তার সুখের কথা ভেবে এগুলাে বলেন না। মনে হয় কাধের উপর
বুঝি টনকে টন বিশাল বােঝা ছিল। এখন কোনােভাবে এই বােঝা নামিয়ে
ফেলতে পারলেই বাঁচা যায়। তাই কোনাে এক পাত্রের সাথে কিছু শর্ত মিলে
গেলেই সেই ছেলের ঘাড়ে মেয়েকে লটকে দেয়া হয়। আর এভাবে বেশ
সংকটপূর্ণ একটি পরিস্থিতির তৈরি হয়।
মেয়েদের দিকগুলাে অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। তাদের চিন্তা ,
দর্শন, পছন্দকে শরীয়াহর মধ্যে থেকে সম্মান জানাতে হবে।
No comments